কর্মসংস্থান ও দক্ষতা উন্নয়নে ভারতের নতুন স্কিলিং প্রোগ্রাম চালু
ভারত সরকার কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং দেশের কর্মশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি নতুন দক্ষতা কর্মসূচি ঘোষণা করে। এই উদ্যোগটি ভারতের জনতাত্ত্বিক লভ্যাংশকে কাজে লাগাতে এবং দক্ষ শ্রমের ক্ষেত্রে দেশকে বিশ্বনেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সরকারের বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গির অংশ।
এই কর্মসূচিটি উন্নত উৎপাদন, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং ডিজিটাল দক্ষতা সহ বেশ কয়েকটি মূল ক্ষেত্রের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এর লক্ষ্য চাকরিপ্রার্থীদের দক্ষতা এবং নিয়োগকর্তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতার মধ্যে ব্যবধান দূর করা, যার ফলে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশকারী লক্ষ লক্ষ যুবকের জন্য অর্থপূর্ণ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা।
এই কর্মসূচির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল শিল্প-প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বিকাশের জন্য সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রের সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতা। এই অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করবে যে প্রদত্ত প্রশিক্ষণ বাজারের প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, স্নাতকদের পক্ষে তাদের নির্বাচিত ক্ষেত্রে চাকরি খুঁজে পাওয়া সহজ করে তুলবে।
সরকার দক্ষতা অর্জনের উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য উল্লেখযোগ্য তহবিল বরাদ্দ করেছে, যেখানে গ্রামীণ ও আধা-শহুরে অঞ্চলে বিদ্যমান প্রশিক্ষণ সুবিধাগুলি উন্নীত করা এবং নতুন তৈরি করার দিকে মনোনিবেশ করা হয়েছে। দেশের সব প্রান্তের মানুষ যাতে মানসম্মত প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করতে এটি সহায়ক হবে।
দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করার জন্য সরকার আরও বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে উৎপাদন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উৎসাহ প্রদান, প্রথম বারের কর্মচারীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং সারা দেশে শিল্প প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলির (আইটিআই) মানোন্নয়ন।
নতুন দক্ষতা কর্মসূচি আগামী কয়েক বছরে লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীকে উপকৃত করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা আরও দক্ষ ও কর্মসংস্থানযোগ্য কর্মশক্তি তৈরি করতে সহায়তা করবে। ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং বিশ্বের দক্ষতার রাজধানীতে পরিণত করার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের দিকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নতুন দক্ষতা কর্মসূচির জন্য যোগ্যতার মানদণ্ড এবং সরকারি অবদানের বিবরণ এখানে দেওয়া হলঃ
প্রোগ্রামের মূল দিক
1. মুখ্য ক্ষেত্র:
- উন্নত ম্যানুফ্যাকচারিং
- নবায়নযোগ্য শক্তি
- ডিজিটাল দক্ষতা
2. লক্ষ্য:
চাকরিপ্রার্থী এবং নিয়োগকারীদের মধ্যে দক্ষতার ফারাক দূর করে লক্ষাধিক যুবকের জন্য অর্থবহ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা।
3. অংশীদারিত্ব:
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি তৈরি, যা
চাকরির বাজারের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
4. প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উন্নয়ন:
- গ্রামীণ ও আধা-শহুরে এলাকায় নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন।
- পুরনো কেন্দ্রগুলোর মানোন্নয়ন।
যোগ্যতা ও সরকারি অবদান
যোগ্যতার শর্ত:
- বয়স: ১৮ থেকে ৩৫ বছর।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা: নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের জন্য নির্ধারিত যোগ্যতা।
- নাগরিকত্ব: ভারতের বাসিন্দা হতে হবে।
- কর্মসংস্থানের অবস্থা: বেকার বা আংশিক কর্মরতদের অগ্রাধিকার।
সরকারি সহায়তা:
- মোট বরাদ্দ: ₹২ লক্ষ কোটি টাকা।
- প্রণোদনা:
- প্রথম কর্মী স্কিম: নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের এক মাসের বেতন (₹১৫,০০০ পর্যন্ত) তিন কিস্তিতে প্রদান।
- ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে চাকরি সৃষ্টি: EPFO-তে প্রথম চার বছরে কর্মচারী ও নিয়োগকর্তার জন্য অতিরিক্ত সুবিধা।
- নিয়োগকর্তাদের সমর্থন: প্রতি কর্মীর জন্য ₹৩,০০০ পর্যন্ত EPFO অংশ দুই বছরের জন্য ফেরত।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
Q1: প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য কী?
নতুন স্কিলিং প্রোগ্রামের লক্ষ্য কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং ভারতীয় শ্রমশক্তির দক্ষতা উন্নত করা।
Q2: কবে এই প্রোগ্রাম চালু হয়?
২৭ নভেম্বর, ২০২৪।
Q3: কারা উপকৃত হবে?
১৮ থেকে ৩৫ বছরের যুব সমাজ, বিশেষ
করে গ্রামীণ ও আধা-শহুরে এলাকার লোকেরা।
Q4: কীভাবে এটি বাস্তবায়িত হবে?
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পরিচালিত হবে, যা
চাকরির বাজারের প্রয়োজন অনুযায়ী তৈরি।
Q5: প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু কী হবে?
উন্নত ম্যানুফ্যাকচারিং, নবায়নযোগ্য
শক্তি এবং ডিজিটাল দক্ষতা।
Q6: সরকার কীভাবে এটি সমর্থন করছে?
বিশাল তহবিল বরাদ্দ, প্রশিক্ষণ
কেন্দ্র উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য প্রণোদনা।
উপসংহার
এই উদ্যোগ লাখ লাখ তরুণকে দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ দেবে, কর্মসংস্থান
নিশ্চিত করবে এবং ভারতের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে। এটি ভারতের "বিশ্বের
তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি" হওয়ার
লক্ষ্যের দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
0 মন্তব্যসমূহ