এমএসএমই কী, কারা যোগ্য এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া
এমএসএমই কী?
এমএসএমই (MSME) মানে হলো মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস, অর্থাৎ ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি উদ্যোগ। এটি ভারত সরকারের একটি উদ্যোগ যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা প্রদান করে। এই খাতটি ভারতের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে। এমএসএমই-এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এবং গ্রামীণ ও পশ্চাদপদ এলাকার শিল্পায়নকে উৎসাহিত করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন (ম্যানুফ্যাকচারিং) এবং সেবা (সার্ভিস) উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করে। ভারতে প্রায় ৬০ মিলিয়নেরও বেশি এমএসএমই রয়েছে, যারা দেশের জিডিপি-তে ৩৭% এরও বেশি অবদান রাখে এবং ১০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করে।
কারা যোগ্য?
এমএসএমই হিসেবে নিবন্ধনের জন্য একটি ব্যবসা বা উদ্যোগকে নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। এই মানদণ্ড বিনিয়োগ (ইনভেস্টমেন্ট) এবং টার্নওভার (বার্ষিক আয়) এর ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। ২০২০ সালের জুন মাসে ভারত সরকার এমএসএমই-এর শ্রেণিবিন্যাস সংশোধন করেছে। বর্তমানে শ্রেণিবিন্যাস নিম্নরূপ:
- মাইক্রো (ক্ষুদ্র): যেখানে প্ল্যান্ট ও মেশিনারিতে বিনিয়োগ ১ কোটি টাকার কম এবং বার্ষিক টার্নওভার ৫ কোটি টাকার কম।
- স্মল (ছোট): যেখানে বিনিয়োগ ১০ কোটি টাকার কম এবং টার্নওভার ৫০ কোটি টাকার কম।
- মিডিয়াম (মাঝারি): যেখানে বিনিয়োগ ৫০ কোটি টাকার কম এবং টার্নওভার ২৫০ কোটি টাকার কম।
যেকোনো ব্যক্তি, স্টার্টআপ, উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী যিনি উৎপাদন বা সেবা ক্ষেত্রে কাজ করছেন, তিনি এমএসএমই-এর জন্য যোগ্য হতে পারেন। তবে, খুচরা বাণিজ্য (রিটেল ট্রেড) বা কৃষির মতো কিছু ক্ষেত্র এমএসএমই-এর আওতায় পড়ে না, যদিও ২০২১ সালে খুচরা ও পাইকারি বাণিজ্যকে সীমিত সুবিধার জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নিম্নলিখিত ধরনের প্রতিষ্ঠান এমএসএমই হিসেবে নিবন্ধন করতে পারে:
- একক মালিকানা (প্রোপ্রাইটরশিপ)
- পার্টনারশিপ ফার্ম
- প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি
- সমবায় সমিতি
- যৌথ পরিবার ব্যবসা (HUF)
নিবন্ধন প্রক্রিয়া
এমএসএমই নিবন্ধন সম্পূর্ণ অনলাইনে করা হয় এবং এটি বিনামূল্যে, কাগজবিহীন এবং স্ব-ঘোষণার ভিত্তিতে। এই প্রক্রিয়াটি "উদ্যম নিবন্ধন" নামে পরিচিত, যা ভারত সরকারের মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে চালু করেছে। নিবন্ধনের জন্য সরকারি পোর্টাল হলো udyamregistration.gov.in। নিচে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াটি দেওয়া হলো:
১. পোর্টালে প্রবেশ: প্রথমে উদ্যম নিবন্ধন পোর্টালে যান। হোমপেজে "For New Entrepreneurs who are not Registered yet as MSME or those with EM-II" অপশনে ক্লিক করুন। ২. আধার যাচাই: আপনার আধার নম্বর এবং নাম দিন। "Validate & Generate OTP" বোতামে ক্লিক করুন। আপনার আধার-লিঙ্কড মোবাইল নম্বরে একটি ওটিপি আসবে। ওটিপি প্রবেশ করান। ৩. প্যান যাচাই: এরপর প্যান নম্বর দিয়ে যাচাই করুন (যদি থাকে)। GSTIN দেওয়ার প্রয়োজন নেই, যদি না আপনার ব্যবসার জন্য GST বাধ্যতামূলক হয়। ৪. ব্যবসার তথ্য প্রদান: আপনার ব্যবসার নাম, ধরন (উৎপাদন বা সেবা), অবস্থান, বিনিয়োগের পরিমাণ এবং গত বছরের টার্নওভারের তথ্য দিন। ৫. নিবন্ধন সম্পন্ন: সব তথ্য জমা দেওয়ার পর, আপনি একটি ১৯ সংখ্যার "উদ্যম নিবন্ধন নম্বর" পাবেন এবং একটি ই-সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত ২-৪ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয়।
প্রয়োজনীয় তথ্য
- আধার নম্বর (বাধ্যতামূলক)
- প্যান নম্বর (ঐচ্ছিক, তবে থাকলে ভালো)
- ব্যবসার ঠিকানা
- ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ
- বিনিয়োগ ও টার্নওভারের তথ্য (স্ব-ঘোষণার ভিত্তিতে)
এমএসএমই নিবন্ধনের সুবিধা
- সস্তায় ঋণ: ব্যাংক থেকে কম সুদে (১-১.৫%) ঋণ পাওয়া যায়।
- কর সুবিধা: ট্যাক্স ছাড় এবং MAT ক্রেডিট ১৫ বছর পর্যন্ত বহন করা যায়।
- সরকারি সাহায্য: সরকারি টেন্ডারে অগ্রাধিকার, পেটেন্ট ফি-তে ৫০% ছাড় এবং বিদ্যুৎ বিলে ভর্তুকি।
- বিলম্বিত পেমেন্ট সুরক্ষা: ক্রেতাদের ৪৫ দিনের মধ্যে পেমেন্ট করতে হয়, না হলে তিনগুণ সুদ দিতে হবে।
উপসংহার
এমএসএমই নিবন্ধন ব্যবসায়ীদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। এটি ঐচ্ছিক হলেও, এর সুবিধাগুলো ব্যবসার বৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হন, তাহলে আজই উদ্যম পোর্টালে গিয়ে নিবন্ধন করুন এবং সরকারি সুবিধাগুলোর সদ্ব্যবহার করুন।
0 মন্তব্যসমূহ