দীর্ঘমেয়াদী কর্মচারীদের জন্য EPS পেনশন হিসাবের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

EPS পেনশন ক্যালকুলেশন নিয়ে বিভ্রান্ত? আপনার পেনশন সর্বাধিক করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী কর্মচারীদের জানা উচিত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

 আপনার EPS পেনশন বোঝা: দীর্ঘমেয়াদী কর্মচারীদের জন্য অপরিহার্য তথ্য

কল্পনা করুন, আপনি বছরের পর বছর কাজ করলেন, অথচ শেষমেশ বুঝতেই পারলেন না আপনার পেনশন কীভাবে কাজ করে! হতাশাজনক, তাই না? আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে Employees' Pension Scheme (EPS)-এ অবদান রেখে থাকেন, তাহলে আপনার পেনশন গণনার নিয়ম জানা অত্যন্ত জরুরি। এটি আপনার কঠোর পরিশ্রমের উপার্জন, এবং এটি সর্বোচ্চভাবে পাওয়া আপনার অধিকার।

এই গাইডে আমরা EPS পেনশন হিসাবের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সহজ ও সরলভাবে ব্যাখ্যা করবো, যাতে আপনি সহজেই বুঝতে পারেন!

 

১. EPS পেনশন আপনার পুরো PF ব্যালান্স নয়

অনেক কর্মী মনে করেন, তাদের পুরো প্রভিডেন্ট ফান্ড (PF) ব্যালান্সের মধ্যেই পেনশনের টাকা অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু এটা ভুল ধারণা! PF-এ দুটি অংশ থাকে:

• Employee Provident Fund (EPF) – এটি আপনি সম্পূর্ণরূপে তুলতে পারেন।
• Employees' Pension Scheme (EPS) – এটি অবসরের পরে প্রতি মাসে পেনশন হিসেবে প্রদান করা হয়।

২. পেনশনের জন্য ন্যূনতম ১০ বছরের চাকরির প্রয়োজন

আপনার EPS পেনশন পাওয়ার জন্য কমপক্ষে ১০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক এবং আপনার বয়স ৫৮ বছর পূর্ণ হতে হবে। এর চেয়ে কম হলে, আপনি কেবল এককালীন টাকা তুলতে পারবেন, মাসিক পেনশন নয়।

৩. EPS-এ মাসিক সর্বোচ্চ অবদান ₹1,250

আপনার প্রকৃত বেতন যাই হোক না কেন, EPS-এ সর্বোচ্চ অবদান ₹১,২৫০ প্রতি মাস (যা ₹১৫,০০০ বেতনের ৮.৩৩%)। এর বেশি অবদান রাখা যায় না, অর্থাৎ উচ্চ বেতন পেলেও EPS পেনশন ক্যালকুলেশন সর্বোচ্চ ₹১৫,০০০-এর উপর ভিত্তি করে হবে।

৪. EPS পেনশন ক্যালকুলেশনের সহজ ফর্মুলা

EPS পেনশন হিসাব করা হয় এই সূত্রে:

(পেনশনযোগ্য বেতন × পেনশনযোগ্য চাকরির বছর) ÷ ৭০

👉 পেনশনযোগ্য বেতন: শেষ ৬০ মাসের গড় বেতন (সর্বোচ্চ সীমা ₹১৫,০০০)।
👉 পেনশনযোগ্য চাকরির বছর: আপনি কত বছর EPS-এ অবদান রেখেছেন।

যদি কেউ ৩০ বছর EPS-এ অবদান রাখেন এবং পেনশনযোগ্য বেতন ₹১৫,০০০ হয়, তাহলে:
👉 (₹১৫,০০০ × ৩০) ÷ ৭০ = ₹৬,৪২৮ প্রতি মাস।

৫. যত বেশি চাকরির বছর, তত বেশি পেনশন (একটু হলেও!)

• যদি কেউ ২০ বছর বা তার বেশি চাকরি করেন, তাহলে অতিরিক্ত ২ বছর বোনাস পেনশনযোগ্য চাকরির মেয়াদে যোগ হয়।
• তবে যেহেতু সর্বোচ্চ বেতন সীমা ₹১৫,০০০, তাই পেনশনের খুব বড় বৃদ্ধি আশা করা যাবে না।

৬. আগেভাগে অবসর নিলে পেনশন কমে যাবে

৫০ থেকে ৫৮ বছরের মধ্যে অবসর নিলে, আপনি পেনশন পেতে পারেন, তবে কম হারে।

• প্রতি বছর ৪% করে পেনশন কেটে নেওয়া হয়।
• যদি আপনি ৫৪ বছর বয়সে অবসর নেন, তাহলে আপনার পেনশন ১৬% কমে যাবে।

৭. EPF ছাড়া EPS পেনশন সম্ভব নয়

EPS পেতে হলে আপনার EPF (Employees' Provident Fund) অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক। যদি আপনি কখনও EPF-এ অবদান না রেখে থাকেন, তাহলে EPS পেনশন পাওয়ার সুযোগ নেই।

৮. অনলাইনে EPS পেনশন চেক করুন

আপনার EPS ব্যালান্স, চাকরির মেয়াদ ও পেনশন পরিমাণ চেক করতে EPFO-এর সদস্য পোর্টালে (Member Portal) লগইন করুন। আপনার UAN (Universal Account Number) সঙ্গে রাখুন!

৯. উচ্চতর পেনশন অপশন – আপনি কি নেবেন?

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের পর উচ্চ বেতনের কর্মীদের জন্য উচ্চতর পেনশন নেওয়ার সুযোগ এসেছে। তবে এর জন্য অতিরিক্ত অবদান রাখতে হবে এবং আপনার EPF ব্যালান্স থেকে বেশি টাকা EPS-এ স্থানান্তরিত হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে চিন্তা করুন!

১০. নমিনি এবং টাকা তোলার নিয়ম

• যদি কর্মীর মৃত্যু ঘটে, তাহলে স্বামী/স্ত্রী বা ২৫ বছরের কম বয়সী সন্তান পেনশন পাবেন।
• যদি ১০ বছরের কম চাকরি করেন, তাহলে আপনি মাসিক পেনশন পাবেন না, তবে EPS টাকা এককালীন তুলতে পারবেন।

 

সর্বশেষ কথা: পেনশন পরিকল্পনা স্মার্টভাবে করুন!

EPS পেনশন একমাত্র অবসরকালীন আয় নয়, তবে এটি জানলে আপনি ভবিষ্যতের জন্য ভালো অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

👉 আপনার EPS পেনশন নিয়ে কোনো প্রশ্ন আছে? নিচে কমেন্ট করুন!

বিশদ জানতে EPFO-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন অথবা একজন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।